হাওজা নিউজ এজেন্সি: মরহুম আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী নাসেরী, যিনি ইরানের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দারসে আখলাক তথা নৈতিক শিক্ষার শিক্ষক ছিলেন, তার এক নৈতিক শিক্ষার ক্লাসে “জিহ্বা ও এর ক্ষতিকর দিক” বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। তার বক্তব্যের মূল অংশ নিম্নরূপ:
আল্লাহর অগণিত নিয়ামত এবং বিশেষভাবে বাকশক্তি ও বাগ্মীতার ক্ষমতা সম্পর্কে:
মহান আল্লাহ্ কুরআনে বলেছেন,
وَإِنْ تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا
আল্লাহর নিয়ামত এত ব্যাপক এবং অগণিত যে মানুষ তা গণনা করতে অক্ষম।
মানুষের সমস্ত সাফল্য এবং অপমান জিহ্বা থেকেই উৎপন্ন হয়
এমনকি যদি আমরা আমাদের সমস্ত জীবন ইবাদত ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কাটিয়ে দেই, তবুও আমরা আল্লাহর একটি নিয়ামতেরও যথাযথ কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারব না।
এই নিয়ামতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো বাকশক্তি ও কথা বলার ক্ষমতা, যা আল্লাহ্ কুরআনে উল্লেখ করেছেন,
«عَلَّمَهُ الْبَیَانَ»
এই নিয়ামত মানুষকে তার চিন্তা ও অনুভূতি অন্যদের কাছে প্রকাশ করার সুযোগ দেয়।
এই নিয়ামতের গুরুত্ব তখন আরও স্পষ্ট হয় যখন আমরা তাদের অবস্থা বিবেচনা করি যারা স্ট্রোকের মতো কারণে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।
বাকশক্তি কেবল জিহ্বা থাকার চেয়েও বেশি। কিছু মানুষ উচ্চতর বাকশক্তির অধিকারী, যা একটি অতিরিক্ত নিয়ামত হিসেবে বিবেচিত হয়।
জিহ্বা এমন একটি মাধ্যম যা মানুষের জীবনকে সুখ বা দুর্দশার দিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। মানুষের সমস্ত সাফল্য, ব্যর্থতা, সম্মান এবং অপমান এই ছোট অঙ্গ থেকেই উৎপন্ন হতে পারে।
ইমাম বাকের (আ.) এ বিষয়ে বলেছেন,
«إنّ هذا اللِّسانَ مِفتاحُ کلِّ خَیرٍ و شَرٍّ فیَنبَغی للمؤمنِ أن یَختِمَ علی لِسانِهِ کَما یَختِمُ علی ذَهَبِهِ و فِضَّتِهِ»
এই জিহ্বা প্রতিটি ভালো এবং মন্দের চাবিকাঠি, তাই মুমিনের উচিত তার জিহ্বাকে সুরক্ষিত রাখা, যেমন সে তার সোনা ও রূপা সুরক্ষিত রাখে।
জিহ্বা এমন এক অঙ্গ যা একাই যে কোনো পরিস্থিতিতে পাপের মাধ্যম হতে পারে
মহান আল্লাহ্ জিহ্বাকে রক্ষা করার জন্য দুটি প্রাকৃতিক আবরণ দিয়েছেন: দাঁত এবং ঠোঁট।
এই দ্বৈত সুরক্ষা জিহ্বার নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বকে নির্দেশ করে। মজার বিষয় হলো, এই দুটি আবরণ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কেবল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলা যায়, যা প্রতিটি অবস্থায় আল্লাহর স্মরণের গুরুত্বকে নির্দেশ করে।
জিহ্বা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো নয়, যেগুলো পাপ করার জন্য বিশেষ পরিস্থিতির প্রয়োজন হয়, জিহ্বা একাই যে কোনো পরিস্থিতিতে পাপের মাধ্যম ও কারণ হতে পারে।
আলেম-ওলামাগণ জিহ্বার সঙ্গে সম্পর্কিগ ত্রিশ থেকে দুইশত বিভিন্ন পাপের তালিকা করেছেন। দুর্ভাগ্যবশত, আজকাল অনেক জিহ্বার পাপ যেমন পরনিন্দা ও অপবাদ দেওয়ার গুরুত্ব কমে গেছে, যা জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষার গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
সুতরাং, এই ঐশ্বরিক নিয়ামত- যা মানুষের সবচেয়ে বড় যোগাযোগের মাধ্যম, তা সঠিক পথে ব্যবহার করার জন্য নিয়মিত যত্ন ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন, আর যা হলো সৃষ্টির সেবা এবং স্রষ্টার ইবাদত।
আপনার কমেন্ট